পরীক্ষার রেজাল্টই জীবনের সব কিছু নয়
—প্রিয় অভিভাবক, আপনাকে বলছি—
এসএসসি’র রেজাল্ট হওয়ার পর থেকেই আমি কিছু টেক্সট পাচ্ছি। যারা টেক্সট পাঠিয়েছে, তাদের কেউ রেজাল্ট খারাপ করেছে। কেউ জিপিএ কম পেয়েছে। তবে তাদের সবারই টেক্সটের ধরণ প্রায় একই। তারা সবাই হতাশ। কেউ পরিবারের লাঞ্ছনার মুখে পড়ে আছে। কেউ সমাজিক লোক-লজ্জার ভয়ে নুয়ে আছে। এই ছেলে-মেয়েগুলোর মানসিক যে অস্থিরতা, সেটা বুঝার জন্য পরিবার বা সমাজ কেউই তাদের পাশে নেই।
আমাদের দেশের অভিভাবকগুলো তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য যতোটা কষ্ট করে, সেটা সম্ভবত দুনিয়ার খুব বেশি সমাজের কেউ করে না। কিন্তু, আমাদের অভিভাবকরা, শেষ বেলায় এসে তাদের ধৈর্য ও সহিঞ্চুতা ধরে রাখতে পারে না। তারা তাদের সন্তানকে মানুষ হিসেবে বুঝার চেষ্টা করে না। একজন সন্তান যে একটা আলাদা মানুষ এবং তার কাছে যা চাইবো তাই যে পাবো না—এই সত্য, চিরন্তন বোধটুকু আমাদের অভিভাবকদের নেই।
একটা মানুষের জীবনে একটা-দুইটা পরীক্ষাই শেষ নয়। একটা মানুষ যখন বেঁচে থাকে, তাকে বহু পরীক্ষার সামনে পড়তে হয়। জীবনে একটা দুটা পরীক্ষায় ভালো করলেই যেমন জীবন স্বর্ণময় হয় না, তেমনি একটি-দুটি পরীক্ষায় খারাপ করলেই জীবন তামা হয়ে যায় না। জীবনের সাফল্য গাছের ফলের মতো না। জীবনের সাফল্য, সোনা আর রূপার মূল্য নয়। মানুষের জীবন অনেক বড়ো, অনেক সম্ভাবনাময়ী, অনেক গুরুত্বপূর্ণ! আমাদের অভিভাবকরা কী বুঝে না—একটা পরীক্ষা এই দীর্ঘ জীবনে কিছুই না!
একটা মানুষের জীবনে একটা-দুইটা পরীক্ষাই শেষ নয়। একটা মানুষ যখন বেঁচে থাকে, তাকে বহু পরীক্ষার সামনে পড়তে হয়। জীবনে একটা দুটা পরীক্ষায় ভালো করলেই যেমন জীবন স্বর্ণময় হয় না, তেমনি একটি-দুটি পরীক্ষায় খারাপ করলেই জীবন তামা হয়ে যায় না। জীবনের সাফল্য গাছের ফলের মতো না। জীবনের সাফল্য, সোনা আর রূপার মূল্য নয়। মানুষের জীবন অনেক বড়ো, অনেক সম্ভাবনাময়ী, অনেক গুরুত্বপূর্ণ! আমাদের অভিভাবকরা কী বুঝে না—একটা পরীক্ষা এই দীর্ঘ জীবনে কিছুই না!
মানুষের জীবনের সফলতা শুধু পরীক্ষার ফলাফলে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা কেউ এঁকে সফল। কেউ গেয়ে সফল। কেউ লিখে সফল। কেউ ব্যবসায় সফল। কেউ বাজিয়ে সফল। কেউ রেঁধে সফল। কেউ সেবা করে সফল। কেউ ভেবে সফল। কেউ উদ্ভাবনে সফল। তাছাড়া, যে পরীক্ষায় অহরহ প্রশ্ন ফাঁস হয়, যে পরীক্ষায় গদবাঁধা প্রশ্ন হয়, যে পরীক্ষা তিন ঘণ্টায় শেষ হয়—সেটা যাচাইয়ের একটা মাণদণ্ড মাত্র। এই পরীক্ষা যে সর্বোত্তম মাণদণ্ড—সেটা কে বলেছে? পৃথিবীর সব দেশেই পরীক্ষা আছে। তার মানে এই নয়, পরীক্ষার বাইরে কারো জীবন সফল নয়! তিন ঘন্টার পরীক্ষার ফলাফল দিয়ে, ষাট-সত্তর বছরের জীবনের সাফল্যকে বেঁধে দেয়া যায় না!
প্রিয় অভিভাবকগণ, আমাদের সন্তানদের পরীক্ষা জয়ের সাহস দিন। পরীক্ষায় শ্রেষ্ঠ হওয়ার চেয়ে, সারা জীবনের পরীক্ষায় দৃঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকু অর্জন করা অনেক কঠিন। সেটা অনেক বড়ো অর্জন। সন্তানদেরকে অদম্য হওয়ার সাহস ও শিক্ষা দিন। সন্তানদেরকে নিজের কাঙ্ক্ষিত পথে বহুদূর যাওয়ার সাহসটুকু দিন। প্রিয় অভিভাবকগণ, আপনার সন্তনকে স্বপ্নজয়ের পথে ক্লান্ত না হয়ে পড়ার সাহস দিন। মানুষের সফলতার পথে সবচেয়ে বড়ো শত্রু হলো ক্লান্তি। সবচেয়ে বড়ো শত্রু হলো নিঃস্পৃহা। যারা স্পৃহাহীন হয়ে পড়ে না, তারা জগৎজয়ী হতে না পারলেও, ব্যর্থ হয় না। আপনার সন্তানকে নিঃস্পৃহ না হওয়ার সাহস দিন।
আমার সত্তর বছরের প্রফেসরের স্পৃহা দেখে আমি লজ্জিত হয়েছিলাম। আত্মজিজ্ঞাসায় জর্জরিত হয়েছিলাম। যে মানুষটি হয়তো আর দশ বছর বাঁচবে, যে মানুষটি হয়তো দিন-রাত কাজ করলেও নোবেল পুরষ্কার পাবে না, সে মানুষটির ভিতরেও কাজের এতো স্পৃহার রহস্য আমি খুঁজতে শুরু করলাম। পরে বুঝলাম, এই স্পৃহা একটা নেশা। যে নেশা তার যৌবনেই গড়ে উঠেছে। জানার স্পৃহা, উদ্ভাবনের স্পৃহা, জীবনর কর্মকে উপভোগ করার যে স্পৃহা, সেটার কাছে বয়স তুচ্ছ! পুরষ্কার তুচ্ছতম!
আমাদের জীবন অনেক দীর্ঘ। আমাদের জীবন অনেক সম্ভাবনায় ভরপুর। আমাদের প্রত্যেকের ভিতরে আমরা যে কতো গভীর, সেটা নির্ধারণ করতেই আমাদের জীবন শেষ হয়ে যায়। মানুষকে কখনোই একটি-দুটি পরীক্ষা দিয়ে বিচার করা যায় না। মানুষ অতো সহজ, সস্তা কিছু নয়। সন্তানদেরকে জীবনের পরীক্ষাগুলোতে উর্ত্তীণ হওয়ার শিক্ষা ও সাহস দিন। তারা একদিন হাসবেই। একদিন হাসাবেই!
……………………
রউফুল আলম
গার্ডেন স্টেইট, যুক্তরাষ্ট্র।
……………………
রউফুল আলম
গার্ডেন স্টেইট, যুক্তরাষ্ট্র।
No comments:
Post a Comment