Tuesday, 22 May 2018

"তুই বেকার"

"তুই বেকার"

বেকার শব্দটি এখন রাজাকার শব্দের মতই ঘৃণিত। "তুই রাজাকার" থেকে ভয়ংকর এখন "তুই বেকার" কথাটা। বেকাররা স্বাভাবিক মানুষ না। তারা ভিন্ন গ্রহের প্রাণী। কিছুটা এলিয়েন টাইপ। "কিছুটা" বললাম কারণ তাদের হাত পা নাক চোখগুলো অবশ্য মানুষের মত। শুধু আবেগ নাই।

বেকারদের অনেক কিছু করা বারণ। ঐ যে তারা স্বাভাবিক না। এটা অবশ্য আমিও মনে করি যে তাদের সবকিছু করা উচিৎ না। কারণ তারা যাই করুক তার তাদের উপর করুণা আর সুশীল সমাজের সুশীল মন্তব্য থাকবেই।
#এক: বেকাররা বন্ধুদের সাথে আড্ডা একেবারেই দিতে পারবেনা, এটা তাদের জন্য পুরোপুরি হারাম। তাদের খুব বেশি বন্ধুবান্ধব থাকতে নেই।
- সে তো বেকার মানুষ, কী আর করবে আড্ডা দেওয়া ছাড়া। তার সাথের সব বন্ধুরা ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করে আর সে চিপায় চাপায় আড্ডা দেয়।
#দুই: বেকারদের আবেগ অনুভূতি মান অভিমান থাকতে নেই। তাদের কোনোরকম বিনোদন করতে নেই। ভালো সময় বলে কিছু নেই।
- একটা চাকরি যোগার করতে পারছেনা আবার ফুর্তি করে বেড়ায়! এজন্যই তো এখনও চাকরি পাচ্ছেনা।
#তিন: বেকারদের কোনো আত্মীয়স্বজনদের বাসায় এবং কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে নেই। মুরুব্বী এবং জ্ঞানী মানুষের আশেপাশে যেতে নেই।
- কী করো এখন বাবা? ও আচ্ছা এখনও চাকরিবাকরি পাওনি। আমাদের পরিমল তো গত মাসে পিডিবি তে জব পেয়েছে! তুমি ঐ পরীক্ষাটা দাওনি?
তিন পরও যদি একই ব্যক্তির সাথে দেখা হয় আবারও একই প্রশ্ন।
#চার: বেকার ছেলেরা সরকারি চাকরির জন্য পড়ালেখা করলেও লুকিয়ে করতে হবে।
- ছেলেটা কি এখনও লেখাপড়া করে! চাকরিবাকরি কি আর করবেনা! পড়তে পড়তেই বুড়া হবে। তার সমানে পড়ত মফিক, গত বছর বিয়েও করে ফেলেছে!
#পাঁচ: বেকাররা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় বিল দিতে নেই। কোথাও একসাথে গেলে রিক্সা অথবা সিএনজি ভাড়াও দিতে নেই।
- আরে রাখ বেটা, তুই এখন বেকার মানুষ। চাকরিবাকরি পাইলে বিল দিস, এখন আমি দিচ্ছি।
#ছয়: বেকারদের টিউশনও করাতে নেই।
- আহারে ছেলেটা টিউশনির লোভ ছাড়তে পারছেনা, চাকরিতে কি আর এরকম কাঁচা টাকা পাবে। কিন্তু এভাবে কি জীবন কাটবে, এখন অন্তত তার চাকরিবাকরি করা দরকার।
#সাত: বেকারদের বেশিক্ষণ বাসায়ও থাকতে নেই।
- কাজ কাম নাই, সারাটাদিন বাসায় বসে কিভাবে যে সময় কাটায়!
#আট: বেকাররা নিজেদের বেকার বলাও বারণ।
-বেকার বেকার বলে আর কয়দিন কাটাবা, এবারতো কিছু করো।
বেকাররা হচ্ছে কুষ্ঠ রোগীর মত। তাদের জন্য মায়া হয় কিন্তু তাকাতে ইচ্ছা করেনা।একজন কুষ্ঠরোগীর মর্ম আরেকজন কুষ্ঠ রোগীই বোঝে শুধু। অন্যকেউতো তাকাতেও ভয় পায়, বুঝবে কিভাবে!
বেকারদের শেষ আশ্রয় তার বাবার হোটেল আর শেষ শান্তনা তার মা। বেকারত্ব এতই ভয়ংকর রোগ এটা বেশিদিন থাকলে ঐ শেষ আশ্রয় আর শেষ শান্তনাও দুর্বল হতে থাকে।
বেকারদের সবাই "তুই বেকার" বলে বলে ধিক্কার দিন। এতে করে তাদের মন শক্ত হবে। ভ্যাকসিনের মত কাজ করবে এটা। বেকারদের ভ্যাকসিনের দরকার আছে। বেকারদের অনেক কিছু হজম করতে হয়।
আপনি বুঝবেন না, বেকাররা ইচ্ছা করে বেকার থাকেনা। তারা ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি খুঁজেনা, তারা ১০-১২ হাজার টাকা বেতনের চাকরি পেলেই জয়েন করবে। ২৬ লাখ বেকারের ভিড়ের মধ্যে তারা সেটাও পায়না। তারা সবাই অযোগ্য না। তারা সবাই অনার্স মাস্টার্স করা, ২২-২৫ বছর শুধু লেখাপড়া করে শেষ করে দিয়েছে বেকার বসে থাকার জন্য না।
আপনারা কেউই বুঝবেন না, অনেক বেকার শুধু সকালের টিউশনির নাস্তাটা খেয়েই দুপুর পর্যন্ত কাটিয়ে দেয়। তারা আর ডিম দিয়ে পাউরুটি খায়না, কারণ ৮-১০ দিনের নাস্তার টাকা জমালে আরেকটা চাকরির বই কেনা যাবে।
সব বেকাররা রাত জেগে ফেইসবুকে চ্যাট করেনা, তাদের চোখে আরামের ঘুমটা আসেনা। তারা স্বপ্ন দেখতেও ভয় পায়। তার বাসায় বসে আরাম করেনা, মানুষের সামনে যেতে লজ্জা পায়।
তারা অসামাজিক না, আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি আর প্রোগ্রামে যেতে তাদেরও ইচ্ছে করে, তারা শুধু আপনাদের "এখনও চাকরি করোনা" এই কথানা শোনার ভয়ে আসেনা। বেকাররা আপনাদের ভয় পায়। মজা না?
সব বেকাররা টিউশনির টাকা দিয়ে অথবা হাত খরচ নিয়ে শপিংয়ে যায়না, তাদেরকে মাসে ২-৩ বার টেলিটকের সিম দিয়ে টাকা চাকরির ফি পাঠাতে হয় আর ভোরে উঠে ট্রেন স্টেশনে লাইন ধরতে হয় ঢাকা যাওয়া টিকিট কিনতে। টিউশনি থেকে দেওয়া খামটা তারা ঐ ট্রেন স্টেশনেই খুলে।
আপনি আসলেই বুঝবেন না, বেকাররা টাকার লোভেও টিউশনি করেনা। মাস শেষে টিউশনিতে ছাত্রের গার্ডিয়ানের লকার খোলার আওয়াজটা তাদের কি আশা দেখায়।
তাই বলি তাদেরকে "তুই বেকার" বলে আরো শক্তি জোগান। আপনি যত এটা বলবেন তারা তত বোস্ট আপ হবে।
লিখেছেন সঞ্জীব কুমার দেব।

No comments:

Post a Comment